ছবি- সংগৃহীত
২০১২ তখন। কোরবানির ঈদের দিন। বন্ধু সজলের বাসায় দাওয়াত খেয়ে বের হলাম। সজল বলল, চল, কোথাও ঘুরতে যাই। বললাম, চল। দুজনে যখন বাজারে পৌঁছালাম, তখন দেখি সুমন, সোহেল আর আলম রহিম ভাইয়ের দোকানের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মাঘের বিকাল। রোদ আছে বলে বোঝা যাচ্ছে না কটা বাজে। সবাই মিলে ঠুমনিয়া শালবনে গেলাম। শালবনের যে অংশটা ছুঁয়ে দিয়ে টাঙ্গন নদী বয়ে চলেছে সেখানে অনেকে বসে আছে। আমরা সেখানে না বসে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। রাস্তার পূর্ব দক্ষিণ কোণে শালবনের ভিতরে বসলাম। বিবিধ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই শালবনকে নাকি সাফারি পার্ক বানানো হবে। সাফারি পার্ক হলে আমরা শালবন লাগোয়া রাস্তায় কে কোন দোকান খুলবো, একটা রিসোর্ট বানানো যায় কিনা, এরকম অনেক আলোচনা। আলোচনার এক পর্যায়ে সজল আর আলম চাচা গেল প্রাকৃতিক কাজ সারতে। আমরা এখন তিন জন বসে আছি।
এমন সময় এক ছেলে আর এক মেয়ে এলো আমাদের দিকে। মেয়েটিকে একটু দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে ছেলেটি আমাদের কাছে এসে নিজের পরিচয় দিল। নাম, ঠিকানা, কোথায় চাকরি করে এসব। তারপর বলল, ভাই আপনারা তো স্থানীয়। আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে আসছি। কিন্তু কয়েকটা ছেলে আমাদের ফলো করতেছে। আমি বললাম, সমস্যা নাই। আপনারা আপনাদের মতো ঘুরেন। আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাইয়েন।
ছেলেটি বলল, সত্যি কথা বলতে আমি বাইরে চাকরি করি তো, তাই গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে পারি না। আপনারা যদি আমাদের একটু সুযোগ করে দিতেন। আমরা একটু ঐ সাইডে( দক্ষিণ দিকে আরেকটু জঙ্গলের ভিতরের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলো) যাবো।
আমাদের সাদা মনে কোনো কাঁদা নেই। বললাম, যান। ছেলেটি তখন সোহেলের হাতে চকচকে একটা একশ টাকার নোট ধরিয়ে দিল। বলল, চা বিস্কুট খাইয়েন। আমি, সুমন নিষেধ করলাম। কিন্তু জোর করে সোহেলের হাতে গুঁজে দিয়ে গেল।
মেয়েটিকে নিয়ে ছেলেটি জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলে আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, কাজটা কেমন হলো। সেসময় সজল আর আলম চাচা চলে এলো। ওরাও আমাদের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনলো। তখন ছেলেটি মেয়েটি ওদিকে কি করছে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা না করে, মেয়েটির চরিত্র, পরিবার আর প্রেমের মরা জলে ডুবে না, এরকম নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। কিছুক্ষণ পরে ছেলেটি আর মেয়েটি বের হলো, ছেলেটি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। মেয়েটির দিকে তাকানোর ইচ্ছে হলো না।
সোহেল, সুমন বলল, আচ্ছা ওরা কোথায় কি করলো, চলো দেখে আসি। কৌতূহলবশত সবাই দেখতেও গেলাম। দেখি, দুটো বড় শালগাছের আড়ালে দুটো হাঁটুর ছাপ মাটিতে ক্লু রেখে গেছে। বুঝতে বাকি রইলো না, তারা কি করছিল। মাটিতে থাকা ছাপ দেখে আমাদের মনে হিল্লোল জাগতে লাগলো। যে মেয়েটিকে ঘৃণায় তাকিয়েও দেখলাম না। এখন তার জন্য মন আকুলি বিকুলি করছে। হায় রে মানুষের মন।
বাজারে এসে সুমন, সজল, আলম আর আমি বুনদিয়া খেলাম। সোহেল খেলো না। কারণ ওর কাশি। ঐ টাকা দিয়ে সে কাশির ঔষুধ কিনলো। সেদিন আমাদের এ বিষয়ে আর কোনা আলোচনা হলো না। পরদিন সকালে সবাই মিলে বসে আছি। তখন কাশতে কাশতে সোহেল এসে বলল, ঐ টাকা দিয়ে ঔষধ খেয়ে তার কাশি বেড়ে গেছে।