ছবি- সংগৃহীত
চৈত্রের শেষদিন। সংক্রান্তির মেলা বসে তোমার বাড়ির পাশে বিলপাড়ে। আমি প্রতি বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি। তুমি এই একটি দিনে শুধু শাড়ি পড়ো। মেলার চুড়ি ফিতার দোকানে ঘুরো। আমি কখনো দূর থেকে, কখনো কাছ থেকে তোমাকে দেখি। তোমাকে দেখতে দেখতে কখন যে তোমার প্রেমে পড়েছি, তা আমি নিজেও জানি না।
আজ চৈত্রের শেষদিন। তুমি মেলাতে আসবে। তোমার সাথে আমার দেখা হবে। অনেক সাহস করে উঠোনের গোলাপ গাছ থেকে সদ্য অর্ধ ফুটন্ত একটা গোলাপি গোলাপ নিলাম, তোমাকে দিবো বলে।
কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গোধূলি লগ্ন হলো। মেলার ভিড় বাড়লো, তারপর ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। তবুও তোমার দেখা নেই। তোমার বান্ধবী টিনার কাছে জানতে চাইলাম, তুমি কোথায়।
তুমি নাকি মামাবাড়ি। বিষ্ণুপুর। সেখানে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে তোমার বাবা। এখন তুমি সেখানে থাকবে। কেন পাঠিয়ে দিয়েছে, জানতে চাইলে টিনা বলল, ও কথা নাইবা শুনলেন৷
টিনার কথা শুনে মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হলো কি যে লুকাতে চাচ্ছে টিনা। আর তা নিশ্চয়ই এমন কিছু যা কাউকে হুট করে বলা যায় না।
বললাম, আমি অনুপমার জন্য একটা গোলাপ এনেছিলাম। তাকে দিবো বলে।
টিনার মুখের হাস্যোজ্জ্বল ভাবটা খানিকক্ষণের জন্য যেন মিলিয়ে গেল। কন্ঠস্বরেও তার এই আকস্মিক পরিবর্তনের রেশ পেলাম। গলার স্বরে খানিকটা অভিমান মিশিয়ে বলল, আর কতজন তার জন্য গোলাপ নিয়ে আসবে।
আর কতজন মানে, বলো কি টিনা।
আমার কল্পনার রাজপ্রাসাদ তখন ভেঙে পড়া শুরু করেছে। কি স্বপ্নই না দেখেছিলাম। আমি অনুপমাকে কিভাবে ফুল দিবো। তাকে কি বলবো। সে কি কি বলতে পারে। এ রকম কত সম্ভাব্য অসম্ভাব্য কথা হতে পারে আমাদের মাঝে বলে ভেবেছিলাম আমি।
টিনা বলল, আপনাকে তাহলে বলেই ফেলি। অনুপমার পাশের বাড়ির নকুল। তার সাথে মন দেয়া নেয়া ছিল অনুপমার। গত সোমবার রাতে তারা ধরা পরেছিল কু্ন্ডদের আম বাগানে। আর সে জন্যই তো অনুপমাকে ওর বাবা মামা বাড়ি পাঠিয়ে দিল।
আচ্ছা ভালো থাকবেন। আমি আসছি।
এই বলে টিনা আমাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।
তখন গোধূলির শেষ আলোক রেখা অন্ধকার আকাশের বুকে মিশে যাচ্ছে। আমার হাতের গোলাপি গোলাপ তো কোন কাজেই এলো না। নিজের মনকে বলছি, অনুপমা সুন্দরী। তার জন্য আট দশ জন ছেলে ঘুরবে, এটা তো স্বাভাবিক। তাদের কারো সাথে তার মন দেয়া নেয়া থাকতেই পারে। আমি তার সম্পর্কে ভালো মতো না জেনে তাকে নিয়ে বছর বছর ধরে যে স্বপ্ন গুলো দেখেছি, তাতে তো তার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। এখন এ গোলাপ আমি কি করি। এ তো কোনো কাজে এলো না। এক বার ভাবলাম, ফেলে দিবো। কিন্তু তাতে ফুলকে অপমান করা হবে। না, আমি ফুলকে অপমানিত করতে পারবো না। ঠিক তেমনি অপমানিত করতে পারবো না অনুপমাকে। আর এ জন্য গোলাপকে চিবিয়ে খেলাম আমি। গোলাপের সাথে হাজারো স্বপ্ন, হাজারো দিন রাত্রি সব যেন নিশ্চিহ্ন করতে চাইলাম। কিন্তু সব কি চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব। সম্ভব নয়।