শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৭ ১৪৩১

লাল চুড়ি

অংশুমালী বর্ম্মন -বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ১৪ অক্টোবর ২০২৩

লাল চুড়ি

ছবি- সংগৃহীত

আজ রিয়ার জন্মদিন। ফেইসবুকে রিয়াকে উইশ করলাম। ও আমাকে রিপ্লাই দিলো, ও আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি বললাম, কি ব্যাপার জন্মদিনের ট্রিট দিবে নাকি?
ও বলল, হ্যাঁ।
বালুঘর রেস্টুরেন্টে আসবেন, ঠিক বিকাল চারটায়। লেট করবেন না। পাঁচটার সময় আমি আমার ছেলেকে আনতে কোচিং সেন্টারে যাবো।
রিয়ার স্বামী দেশের বাইরে থাকে। উপজেলা শহরের একটি ছোট্ট বাসায় দুটো ছেলেকে নিয়ে থাকে রিয়া। রিয়া দূর সম্পর্কের মামাতো বোন। একটা সময়ে ভালোলাগার অনুভূতি এলেও সেটা আর এগোয় নি। কিন্তু এখনও রিয়ার সাথে দেখা করার ইচ্ছা করে। দেখা হলে ভালো লাগে। কিন্তু রিয়ার মনে কি চলে, তার খবর জানা হয় নি। মেয়ে মানুষের মনের খবর জানতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়। আর এখন সে চঞ্চলা চপলার পর্ব শেষ করে সংসার করছে। পাক্কা গৃহিণী।

বিকাল চারটায় পৌছালাম বালুঘর রেস্টুরেন্টে। দেখি রিয়া আগেই এসেছে। তার পরনে লাল পেরে শাড়ি,  লাল ব্লাউজ, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক। হাতে লাল চুড়ি। আমি তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
রিয়া মুচকি হেসে বলল, কি হলো, আসুন।
রিয়ার কথায় আমার যেন ঘোর কাটলো।
বললাম, শুভ জন্মদিন রিয়া।
রিয়া বললো, বসুন। চেয়ার টেনে ওর মুখোমুখি বসলাম।
আমার গিফট কই?
স্যরি, রিয়া। তাড়াহুড়োয় তোমার জন্য গিফট আনতে পারি নি।
রিয়া বলল, আচ্ছা, সমস্যা নেই। পরে কখনো দিয়েন।
আমি আর রিয়া পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। তখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। ঘড়ির কাঁটার চেয়েও সময় যেন দ্রুত গতিতে ছুটছে।
আমি বললাম, রিয়া, তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
রিয়া মুচকি হেসে বলল, তাই। তারপর হাত দুটো আমার সামনে তুলে বললো, লালচুড়ি গুলো দেখেন তো, চিনতে পারেন কিনা?
আমি রিয়ার হাতের লাল চুড়ির দিকে তাই আছি। ঠিক মনে করতে পারছি না।  
রিয়া বলল, দোলের মেলাতে আপনি এই চুড়ি কিনেছিলেন, পরে আমাকে দিয়েছিলেন।
আমার মনে পড়লো, কিন্তু সে তো প্রায় দশ বছর আগের কথা। ওর জন্য লাল চুড়ি কিনতে গিয়ে সে কি বিড়ম্বনা। সবুজ ডাক্তার সাথে ছিল। তাকে বললাম, কাকু, চারপাশে চেনা জানা সবাই। আমি চুড়ি কিনছি দেখলে তো, কানাঘুষো হবে। তারপর তিল থেকে তাল।
সবুজ কাকু বলেছিল, অত কিছু ভেবে কেউ প্রেমে পড়ে না, আর বিচার বিবেচনা করে কারো জীবনে প্রেমও আসে না।
অতঃপর আর কি করা, চুড়ি কিনলাম।

আপনার এই চুড়ি গুলো আমি খুব যত্নে রেখেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো, চুড়িগুলোকে খুব যত্নে রাখবো।
ভালো থাকবেন।
হাত নেড়ে এক রিকশাওয়ালাকে ডাকলো রিয়া। বলল, মামা পিথাগোরাস যাবেন। রিকসাওয়ালা যাবে। রিকসায় বসলো রিয়া।
বলল, আজ আসি।