ছবি:সংগৃহীত
শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করলো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা। বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দিনটি প্রবাসেও পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে। এদিন স্মরণ, দোয়া আর নানা আয়োজনে ছিল শোকের আবহ।
এ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত প্রবাসী বাঙালিরা শোককে শক্তিতে পরিণত করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় যার যার জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী।তিনি বলেন, খুব অল্প কথায় জাতির পিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার হৃদয়ের যে গভীরতা, বাঙালির জন্য তার হৃদয়ের যে ভালোবাসা, যে গভীর মমত্ববোধ সেটা সমুদ্রের চেয়েও গভীর। ফিদেল কাস্ত্রো তাই বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনও স্থায়ী হতে পারে না। এটি ছিল জাতির পিতার কালজয়ী একটি ভাষণ। যা অনুসরণ করে বাংলাদেশ পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। শান্তি রক্ষায় আমাদের যে বলিষ্ঠ অবদান, এটি বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের উপর স্থাপিত।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যে অশান্তি ও অস্থির অবস্থা চলছে, আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ, চিন্তা চেতনা সেটা প্রয়োগ করার মাধ্যমে সেই অস্থিরতা দূর করা সম্ভব।
অপরদিকে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী পালনের অংশ হিসেবে সোমবার বিকেলে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনির যুক্তরাষ্ট্রে অব্যাহত অবস্থান দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক। রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যর্পণ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘গেম-চেঞ্জার’ হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি
এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালন করেছে।
এ উপলক্ষে কনস্যুলেটে দু’ পর্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে এক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে মূল ধারার রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যায়, অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র বাঙালীরই নয়, বরং তিনি বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে সকলের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
এসব অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ দোয়া, খাবার বিতরণ ও আলোচনা। জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ ক্লাব ও জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী বিশেষ কর্মসূচি পালন করে।