রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত, নিরাপত্তা নিজ ও আঞ্চলিক উদ্বেগ

হীরক পাশা

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২০ জুলাই ২০২৩

বাংলাদেশ-ভারত, নিরাপত্তা নিজ ও আঞ্চলিক উদ্বেগ

ছবি- সংগৃহীত

ভূরাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশ ভারত ও চীনের ন্যায় প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো ধরনের শত্রুতামূলক সস্পর্ক বহন করতে পারে না । ভূগোল ছাড়াও ইতিহাস, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তাবোধ, বানিজ্য ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার মতো উপাদান স্থিতিশীল সম্পর্কের গুরুত্বকে তুলে ধরে । স্বাধীনতার পর প্রথম বছরগুলোতে সহকারীভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল।সকল মন্তব্য সরল পাকিস্তান বিশেষ ও দেশের জামায়াতের সবাই জানে, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধীর আরও অনেক মুসলমান হিসেবে পরিচয় বলেছেন, কাফির বলতো সরল মানুষ হত্যা করছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে। নির্যাতনের সেনাবাহিনী সহ-তার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে  জামায়াতের অন্যায় সুবিধা হবে সম্পত্তির বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ জাতীর ধ্বংসের, মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনের মুখে যুদ্ধকালীন সাহায্য সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকেই ভারতীয় শাসক ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ করে তোলে।

ভারতকে তারা দাতা হিসেবে দেখতে বলে মাত্র, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রেখাপাতকারী কিছু ঘটনা প্রবলভাবে জনমতকে প্রভাবিত করতো জানি সবাই। এসবের মধ্যে আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তান বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ভারতে স্থানান্তর, একই কাপড়ের ভারতীয় সেনাদের ইউনিফর্মের আদলে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর ইউনিফর্ম তৈরি, ফারাক্বা রাঁধকে কেন্দ্র করে চলমান আলোচনায় গঙ্গানদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা, বানিজ্য ও অবাধ চোরাচালান এবং সমুদ্রসীমানা নিয়ে বিরোধ সূত্রপাতকারী ইস্যু ছিল।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টকে দু'দেশের সম্পর্কের মধ্যে বিভাজন রেখা বিবেচনা করা হত তা সত্ত্বেও ১৯৭৭ সালে ভারতে জনতা পার্টির নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় আসায় সম্পর্ক খানিকটা ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ও সার্ক-এর প্রস্তাব দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা-বিশেষ করে ভারতকে লক্ষ্য করে সহযোগিতার এক কাঠামো সূচনার চেষ্টা করেছিল । তবে ভারত বাংলাদেশের সংঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যে কোন আলোচনায় শক্ত অবস্থান নিচ্ছিল তাদের মিত্র আওয়ামী লীগ সরকারক্ষমতাসীন হওয়া পর্যন্ত। মিত্র দলটি ক্ষমতায় আসার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিঘ্নকারী দুটি বড় ইস্যু-গঙ্গা নদীর পানি ভাগ করার চুক্তি (১৯৯৬) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি (১৯৯৭) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয় । আওয়ামী লীগ সরকার (১৯৯৬-২০০১) ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত 'অবৈধ অভিবাসী' ইস্যুটি ভারত আর বিস্তার করেনি । কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর (২০০১) এটি আবার বিরোধ হিসাবে দেখা দেয়। আবার ইস্যুটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দূষিত করতে বড় অবদান রেখেছিল। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা এসব মানুষকে সীমান্তের অপরপারে ঠেলে দিয়ে 'পুশব্যাক' করার অনেকগুলো চেষ্টা হয়েছিল । বিপরীতে এদের বাংলাভাষী ভারতীয় নাগরিক আখ্যায়িত করে তাদের বাংলাদেশে 'পুশইন' করার চেষ্টা করার মধ্যে দিয়ে দু'দেশের সীমান্ত এলাকায় তখন উত্তেজনা চরমে উঠেছিল। মাঝেমধ্যে দু'দেশের সীমান্তরক্ষীরা পরম্পরের বিরুদ্ধে ভারি অস্ত্র ও তা ব্যবহার করে উত্তেজনা পারদ উঁচুতে তুলে দিচ্ছিল । এছাড়া বিএসএফের হাতে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যাকাণ্ডও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল যা এখনও অব্যাহত আছে।

 ভারতের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গরু চোরাচালানকারী বলে অখ্যায়িত করা হয় । ২০১৩ জুন পর্যন্ত ১৪ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন এবং ২০০৯ সালে ৬৭ জন বাংলাদেশী সীমান্তে নিহত হয়েছেন। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মানবিকতার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল যখন ২০১১ সালে কুড়িগ্ৰাম সীমান্তে ফেলানী নামের এক  কিশোরীকে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর গুলি করে মারা হয় এবং লাশটি কয়েক ঘণ্টা ধরে বেড়ার গায়ে ঝুলেছিল । বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীতে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদকে অনেক বোদ্ধা বলেন বিশ্লেষক দু'দেশের সম্পর্কে উন্নতি হওয়ার সর্বোচ্চ স্তর বলেছেন। এটা ঠিক যে আওয়ামী লীগ ও ভারতের শাসকদের মূল্যবোধের মধ্যে মিল এবং পরম্পরের স্বার্থের ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় আচরণের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে হাসিনা দিল্লি সফরে গেলে উভয় দেশ 'উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার এক ব্যাপক কাঠামো' নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিল । সফরের সাফল্য নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাসপূর্ণ আলোচনা তখন হয়েছিল। এমনকি বলা হয়েছিল যে ভারত বাংলাদেশকে অনেক বেশি ইতিবাচক সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু পরের বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (প্রয়াত) যখন বাংলাদেশে ফিরতি সফরে আসলেন তখন তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া এবং ১৯৭৪ সালের সীমান্তে চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো সময়সীমা টানতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রত্যাশা ধূলিসাৎ হয়ে যায় । সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মূহুর্তে তিস্তা চুক্তির খসড়ায় তাঁর রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা হবে না বলে সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেন। মনমোহন সিং সফরকালে ভারতকে বাংলাদেশের জলসীমা ও স্থলভাগ ব্যবহার করে ত্রিপুরা রাজ্য ট্রানজিট নিয়েছে। 'সাময়িক ট্রানজিট' হিসাবে অখ্যায়িত করে এর জন্য কোন চার্জও নেওয়া হয়নি। এছাড়াও শেখ হাসিনা সরকারের জন্যও বর্তমান সস্পর্ক কিছুমাত্র সুখকর বলে মনে হয়নি বরং সরকারের উচ্চতম পর্যায়ে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছিল। ২০১২ জানুয়ারিতে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমন্ত্রিত হয়ে শেখ হাসিনা আগরতলা সফরের সময় সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আলোচনা মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় বলে আমরা জানি। দু'দেশের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতা প্রয়োজন এবং অর্থপূর্ণ সহযোগিতা তখনই সম্ভব যখন রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে ।

বড় রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে তার প্রতিবেশীদের ব্যাপারে অধিক নমনীয় হতে হবে। ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে অবস্থান করায় ভারতের পক্ষে এসব নদীর পানি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ, স্থানান্তর ও ব্যবহার করার সুবিধা আছে। ভাটির দেশ বাংলাদেশকে তার অর্থনীতি ও প্রতিবেশের জন্য বাংলাদেশের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে যদি ভারত কোন নদীর পানি এককভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে। সবাইকে দেশের মানুষ জানি সবাই। "গঙ্গা" ছাড়া আর  কোন নদীর ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে কোন চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। তিস্তা চুক্তি করা নিয়ে টালবাহানা করার সময় ২০১৪ এর এপ্রিল মাসে গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার করার এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে মাত্র পাঁচশ কিউসেক পানি পাওয়া গিয়েছে। তবে অন্যদিকে ভাগাভাগি করার ফর্মূলা অনুযায়ী কোন কোন সময় গঙ্গা থেকে পানি না পাওয়া অভিযোগ আছে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে সে রকম কোন রাজনৈতিক অভিপ্রায়, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের না থাকায় এখন পর্যন্ত কোন চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারতীয় কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূল সরকারের দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছে তিস্তাপারের বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশ সরকারও যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে তিস্তার জন্য প্রয়োজনীয় পানি ছাড়ার অনুরোধ ছাড়া আর কোন শক্তিশালী কূটনৈতিক পন্থা গ্ৰহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে । অন্যদিকে বরাক নদীর উপর প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য আরেকটি ক্ষতিকারক ইস্যুতে পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের ভেতর এ প্রকল্প দ্বারা দেশের মধ্যে প্রবাহমান সুরমা ও কুশিয়ারা নদীগুলোর জন্য ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ নদী দু'টির প্রবাহ, পানিতে লবণাক্ততা ও প্রতিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মত । যদিও ভারতের তরফ থেকে 'কিছুই করা হবে না' যা থেকে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে বলা হয়েও কোন যৌথসমীক্ষা ও জরিপের অনুপস্থিতিতে এ ধরণের আশ্বাসের কোন গুরুত্ব নেই।  এছাড়া ভারতের পরিকল্পিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প দ্বারা পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের নদীগুলোর পানি ভারতের খরাপীড়িত রাজ্যগুলোতে স্থানান্তর বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে ভারতের যে কোন একতরফা পরিকল্পনা বাংলাদেশে ভারতকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক মনোভাব তৈরির জন্য যথেষ্ট বলা কোন অতিকথন নয় ।‌

 মতে(০৩)### বাংলাদেশের বিজিবির সমণিয় বললেন জানি। ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটারের অভিন্ন সীমান্তের অনেক স্থানের মাঝে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিবর্ষণ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করে। অনাকাঙ্ক্ষিত যাতায়াত বন্ধ করার জন্য সীমান্তকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা কোন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া বোঝায় না।  এদিকে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করার ব্যাপারটিকে একটা স্বাধীন বাংলাদেশকে করার ব্যাপারটিকে খাটো করে দেখার প্রবণত লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা 'হত্যা করার জন্যে গুলি' নীতি অনুসরণ করে যেসব মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের জন্য। উপরন্ত এজাতীয় ঘটনাকে বৈধ বলেও সাফাই গাওয়া হয়। দেখা যায় যে হত্যার শিকার অধিকাংশই হচ্ছে অবৈধ গরু চোরাচালানকারী। হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুলি না চালায়ে অনুপ্রবেশকারীদের শারীরিকভাবে আহত করা যায় বলে অভিমত আছে । বাংলাদেশের চাপের মুখে হত্যাকাণ্ডের বিশেষত্ব হিন্দু সংখ্যালঘু কমে আসতে দেখা গেছে। যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বাংলাদেশের বিজিবির কেয়ার লক্ষ্যে না করে সীমান্তের ভেতর এসে বা কাঁটাতারের পাশেই বাংলাদেশ অংশে নিজ জমিতে কাজ করতে যাওয়া মানুষ হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোন সীমান্তরক্ষীকে এখন পর্যন্ত কোন ভারতীয় আদালতে দন্ডিত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু যদিও বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার জন্য দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ভারতে রফতানি পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আসছেন ।
যদিও বাজারে অধিকহারে ঢোকার জন্য তারা শুল্ক ও অশুল্ক সুবিধা চেয়ে আসছেন । বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রক্রিয়া অনুসরন করে ভারত সংস্থার সব সদস্যর জন্য বহুপাক্ষিকভাবে শুল্ক কম করেছে।

 সাফটা চুক্তির অধীন ২৫ ক্যাটাগরির বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়নি।২০০২ সালে ভারত ১৬ ক্যাটাগরির ৪০টি বাংলাদেশী পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে সম্মত  হয়েছিল যেগুলোর কোন রফতানির সম্ভাবনাই ছিল না। ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশকে যে অশুল্ক বাধার মোকাবেলা করতে হয় তার মধ্যে এ্যন্টি-ডামপিং ডিউটি, রুলস অভ অরিজিন ক্লজ, স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন টেকনিক ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারত বাংলাদেশের ৪৭টি পণ্যকে সংবেদনশীল তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় যাতে শুল্কমুক্তভাবে ভারতের বাজারে সেগুলো প্রবেশ করতে পারে। অন্যদিকে মনমোহন সিং এর সফরে ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্তের তালিকায় আনা হয়। পরে সাফটার আওতায় শুধুমাত্র ড্রাগ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া সব পণ্যের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ভারতে রফতানি বাড়ালেও অশুল্ক বাধার কারণে পরে তা হ্রাস পায়।

উপসংহার:                      
বাংলাদেশের ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উষ্ণ হয় না বলে ভারতে এক ধরনের মত আছে। এ রকম মত শুধু ভ্রান্তই নয় বরং বাংলাদেশকে নির্ভরশীল হিসাবে গণ্য না করার অজুহাত বলা যায়। জিয়াউর রহমান ও হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ তাঁদের নিজ নিজ মেয়াদে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় পরিচয় বা স্লোগানগুলোকে ব্যবহার করেছেন। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম  ঘোষণা অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তাদের অধিকারের ব্যাপারে ভীত করেছে নিঃসন্দেহে কিন্তু বাংলাদেশ কখনই ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষিত হয়নি। শেখ হাসিনাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্ম ব্যবহার করছেন।

 সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহাল করেছেন, কিন্তু অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে রাষ্ট্রধর্মের বিধান বাতিল করেননি। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে ভারতের বন্ধু হিসাবে পরিচিত করতে পেরেছেন । সুতরাং বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের চারণভূমি দেখলে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।'অবৈধ অভিবাসী' ইস্যুটির যে দায় বাংলাদেশের ওপর চাপানো হয় তার পক্ষে এখন পর্যন্ত কোন পরিসংখ্যান যেমন দেওয়া হয়নি তেমনি তা ধারাবাহিকভাবে তোলা হয় না। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বা ভোটের বাক্সে লাভের জন্য তোলা হয়।

 অভিবাসনের অভিযোগটি যে আসাম রাজ্যে করা হয় সেখানে 'অসমিয়া' বলে ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষকেও তাড়ানোর ঘটনাও দেখা যায় । 'অবৈধ অভিবাসীদের' জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে দাবি করা রাজনৈতিক বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দেয় না।ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রশমিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের নিশ্চয় ভূমিকা আছে। অপরের বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজ মাটিতে আশ্রয় দেওয়ার নীতি পরিত্যাগ করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো হবে নিশ্চয় । শেখ হাসিনা সরকার এ ব্যাপারে তার অবদান রেখেছে । কিন্তু আইএসআই বা আল কায়েদার নিয়ে অতিরঞ্জিত, কোন ক্ষেত্রে কল্পিত বাংলাদেশ বিরোধী অভিযোগ সম্পর্কের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। পারস্পরিক সহযোগিতা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন । হাসিনা সরকার ভারতকে বহু আকাঙ্ক্ষিত ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর বা ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের অপেক্ষা না করে। ভারতের নিরাপত্তা নিয়েও বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ দূর করতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য যেসব ইস্যুতে ভারতের ইতিবাচক পদক্ষেপ দরকার সেসবের কোন সমাধান বের হয়নি। বাংলাদেশী নেতৃত্বের ভারতীয় আকাঙ্খা পূরণ পাল্টা পদক্ষেপ দ্বারা সমর্থন দেখানোর ভারতীয় ব্যর্থতাকে ভারত পোষণ বলে আখ্যায়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ইতিমধ্যে যে তিনটি গুরুত্বপুর্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার যেকোন একটির ব্যাপারে দীর্ঘসূত্র বা উদাসীনতার নীতি বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বসূলভ নয় । অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে বিশ্বস্ত মনে করা এবং বিএনপির ব্যাপারে সন্দেহ দেখানো নীতিও সমর্থনযোগ্য না । কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক না করে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির বিষয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের দায়িত্ব বেশি এ অর্থে যে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি অনিষ্পন্ন থাকলে ছোট রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভেতর প্রতিবেশীর ব্যাপারে ভীতি তৈরি হতে পারে। তার অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থে ভারতকে এসব বিষয়ে মীমাংসার উদ্যোগ নিতে।    


হীরক পাশা