ডঃ শেখ আলীমুজ্জামান- টোকিও বৈশাখী মেলা ও কারি ফ্যাস্টিভ্যাল এর প্রধান সমন্বয়কারী।
সম্প্রতি ঢাকা থেকে টোকিও ফিরেই শুরু হয়ে গেছে প্রবাসী সামাজিক কর্মাকান্ডে অংশগ্রহণের ব্যস্ততা। গতকাল রবিবার, দুটো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলাম।
প্রথমটি বিকালে, বাংলাদেশ মুসলিম কমিউনিটির উদ্যোগে একটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য আয়োজিত সভা। জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে, অনেকগুলি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন আমাদের অন্যতম প্রয়োজন একটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করা। এদেশে তুর্কি, পাকিস্তানি, ইন্দোনেশিয়ান প্রবাসীদের নিজস্ব কবরস্থান আছে। এমনকি আফ্রিকার দেশ, ঘানা প্রবাসীদের নিজস্ব কবরস্থান থাকলেও আমাদের এখনও নেই। একজন মুসলিম হিসাবে সভায় অংশগ্রহণ করেছি এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রকল্প এগিয়ে গেলে অনুদান প্রদান করার অঙ্গীকার করেছি। আশা করি, প্রকল্পটি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এগিয়ে যাবে এবং বৃহত্তর প্রবাসী কমিউনিটির সকলের অংশগহণের মাধ্যমে সফল হবে।
দ্বিতীয়টি সন্ধ্যায়, বাংলাদেশ আর্ট ফোরাম আয়োজিত ত্রয়োদশ বসন্ত বরণ উৎসব। বাংলাদেশে বসন্ত বরণ ও ভ্যালেন্টাইনস ডে, একই দিনে (১৪ ফেব্রুয়ারি) উদযাপিত হয়। জাপান প্রবাসী তরুণ প্রজন্ম ভ্যালেন্টাইনস ডে সম্পর্কে জানে। স্বদেশের বসন্ত বরণ সংস্কৃতির সাথেও তাদের সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটির সাথে একজন বাঙালি হিসাবে, শুরু থেকেই আমি সম্পৃক্ত। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আর্ট ফোরাম এ বছর আমাকে একটি উত্তরীয় উপহার দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আমি তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং আগামীতেও তাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অঙ্গীকার করেছি।
উপরোক্ত অনুষ্ঠান দুটোর প্রেক্ষাপটে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। গতকালকের দুটো অনুষ্ঠান আগে থেকেই স্যোসাল মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত হলেও, কবরস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য আয়োজিত সভায় যারা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই বসন্ত বরণ উৎসবের অনুষ্ঠানে আসেননি। আবার, যারা বসন্ত বরণ উৎসবের অনুষ্ঠানে ছিলেন তাঁদের অনেকেই কবরস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য আয়োজিত সভায় যাননি। এটা অবশ্য যার যার ব্যক্তিগত বিষয়, এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। তবে এখানে প্রসঙ্গ উপস্থাপন করার একটি কারন আছে। সেটা হচ্ছে আমাদের Diverstiy of Identity অর্থাৎ আত্মপরিচয়ের বহুমুখিতা। আমরা একই সাথে মুসলিম এবং বাঙালি। এবং এই দুই পরিচয়ের সমন্বয়ে আমরা বাংলাদেশী। একজন মুসলিম হিসাবে কবরস্থান প্রতিষ্ঠা এবং একজন বাঙালি হিসাবে বসন্ত বরণ, দুটোই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বুঝতে হবে এবং প্রবাসী প্রজন্মকে বোঝাতে হবে।
দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, দেশে আমাদের এই দুই আইডেন্টিটির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ক্রমাগত সাংঘর্ষিক পাল্টা অবস্থানে রূপ নিচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে সেটা স্বল্প পরিসরে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে একটি প্রবাদ বাক্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেষ করছি - এক হাতে তালি বাজে না।