লেখকঃ পি আর প্ল্যাসিড
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথা, "আমি যতোই করি না কেনো কিছু লোক তার বিরোধিতা করবেই। এমনকি তাদের সোনার থালা বানিয়ে দিলেও তা অপরিবর্তিত থাকবে।" বাস্তবেই তা-ই। আমি আমার আশেপাশে এমন কিছু লোকজনকে চিনি যারা সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুবিধা ভোগ করছে। আবার এটাও তারা তাদের মনে লালন করছে যে, সরকার বদলালেই তারা পল্টি দিবে। মুখে তারা বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগের কথা বললেও অন্তরে তাদের রয়েছে ভিন্ন চিন্তা আর ভিন্ন বিষয়। এশ্রেণীর লোকদের খুঁজলে দেখা যাবে সংখ্যায় তারা কম নয়, বরং বেশি।
লোক গুলো সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে এমন যে, তারা অহেতুক মানুষের সমালোচনা করে। সমালোচনার কোনো বিষয় না পেলে এমনও বলে, "লোকটি সাদা শার্ট পরেছে" তাদের কাছে যেন এটাই দোষ। অর্থাৎ তাদের কাছে মানুষের দোষের কোনো শেষ নেই, নেই কোনো নির্ধারিত বিষয়ও। সমালোচনা করার কোনো কিছু না পেলে একটা কিছু খুঁজে বের করে মানুষের সমালোচনা করাই যেন তাদের কাজ।
আমি নিজেও একজন সমালোচক। তবে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার মতো সমালোচনা করার চেষ্টা আমি করি সরকারেরও অনেক কাজের সমালোচনা করি, যদি সে-কাজ হয় সমালোচনা করার মতো। তার মানে আমি সরকারের বিরোধিতা করি না। আমার লেখা পড়ে উল্টো - সিধা না বুঝে কেউ কেউ বাজে মন্তব্য করতেও ছাড়ে না। যারা আমার লেখা নিয়ে এমন কথা বলে বুঝতে হবে তাদের কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিংবা সমস্যা তাদের অন্য কোথাও রয়েছে। এটা আমি বুঝি বলেই এখন আর কিছু মনে করি না তাদের এমন উপজাযক হিসেবে আমার লেখার সমালোচনা করায়। তবে তখনই মনে পড়ে আমার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সে-ই কথা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে এক শ্রেণীর লোক আমার মনে হচ্ছে অনেক কিছু না জেনেই তাঁকে এয়ারপোর্টে কে স্বাগত জানালেন আর কে স্বাগত জানালেন না এটা নিয়ে ফেসবুকের চেহারা বদলে দেবার চেষ্টা করেছে। ভারতে কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথীদের এয়ারপোর্টে স্বাগত জানানো সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পর্কে তাদের অজানা থাকতেই পারে। কোনো কিছু না জানা অন্যায়ের কিছু না। পাপও না। এবিষয়টি আমারও জানা ছিলো না, যা সম্প্রতি জানা হলো। বলতে লজ্জা নেই। লজ্জা পেলে ভালো কিছু জানা বা শেখা হয় না। এজন্যই অজানাকে জানার চেষ্টা আমার বরাবরই।
আসলে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ভারত সফরে গেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টে না গিয়ে অন্য কোনো মন্ত্রী বা ক্ষমতায় থাকা উচ্চ পদস্থ কেউ তাকে স্বাগত জানান। তারপরেও প্রটোকল অনুসরণ না করে কখনো হয়তোবা প্রধানমন্ত্রী নিজে রাষ্ট্রীয় অতিথীদের এয়ারপোর্টে স্বাগত জানানোর কাজটি করে থাকেন। পুরনো ফাইল ঘাটলে এমনই জানা যায়।
কথা হচ্ছে, এবারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলে তাঁকে কেনো দেশটির প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টে স্বাগত জানালেন না এনিয়ে পানি ঘোলা করতে পুরাতন কিছু ছবির সাথে সম্প্রতি কালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ছবি আপলোড করেছে কেউ কেউ। ছবি গুলো দেখে মনে হয়েছে তারা যেন শেখ হাসিনাকে ছোট করতেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (প্রয়াত) এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সুসম্পর্ক প্রকাশ করতে চেয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আমার মোটেও লেখার ইচ্ছে ছিলো না। লিখছি এজন্য যে, এই লোক গুলোই সুযোগ পেলে ভারতের বদনাম করে। সমালোচনা করে কথা বলে মোদি সরকারের এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে। এজন্যই মনে খটকা লেগেছে আমার। এরা আসলে কি বলতে আর কি করতে চায়, সম্ভবত ওরাও সঠিক জানে না বা বোঝে না। তাই বুঝে আর না বুঝেই হৈচৈ করা। এদেরকে যতোই বোঝানো হোক এরা যে এর বাইরে কিছু করতে জানে না, পারবেও না করতে, সেটাই স্পষ্ট।
এরা যদি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে এয়ারপোর্টে তাঁকে কে স্বাগত জানালো আর কে স্বাগত জানালো না, এসব নিয়ে কথা না বলে প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে দেশে ফিরে আসার পর দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফলাফল নিয়ে কথা বলতো তবেই বুঝতাম তাদের এমন হৈচৈ এর অর্থ আছে। দুটা দিন ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আমাদের দেনা পাওনার হিসেবের ঘরে কতোটা কি পরিবর্তন হলো আর দেশের নাগরিক কতোটা লাভবান হলো, সেটা নিয়ে কথা বললে তবেই বুঝতাম ঠিক কাজটি-ই তারা করছে। এছাড়া সবটাই মনে হবে অরণ্যের রোদন মাত্র।