আলী যাকের
আলী যাকের, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যাক্তিত্ব। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ দেশে মঞ্চ নাটকের আধুনিকায়নে যাদের ভুমিকা অগ্রগন্য, তাঁদের একজন। নাট্য সংগঠক, অভিনেতা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘অভিনয়টাকে আমরা উপাসনার মতো নিই’। পেয়েছেন একুশে পদক সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা।বিশিষ্ট অভিনেতা, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের জন্মদিন রবিবার (০৬ নভেম্বর)।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের।মাহমুদ তাহের ও রেজিয়া তাহেরের চার সন্তানের মধ্যে যাকের ছিলেন তৃতীয়। পিতার সরকারি চাকরির সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে শৈশব অতিবাহিত করেন। তাঁর ছেলে ইরেশ যাকেরও জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৬ সালের ৬ নভেম্বর।২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে আজ ৭৮তম জন্মদিন পালন করতেন এই গুণীজন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই নাট্যচর্চা শুরু করেছিলেন আলী যাকের। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।এরপর নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগে এই নাট্যদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।মঞ্চে নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর চরিত্রে আলী যাকেরের অভিনয় এখনও দর্শক মনে রেখেছে। ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ রবিবার’এর মতো টিভি নাটকে অভিনয় করেও তিনি প্রশংসা পেয়েছেন।‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী যাকের। বেতারে অর্ধশতাধিক শ্রুতি নাটকেও কাজ করেছেন। অভিনয়, নির্দেশনার বাইরে তিনি ছিলেন একজন নাট্যসংগঠক; পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সঙ্গে।
দীর্ঘ কর্মজীবনে সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন আলী যাকের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।
নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশী নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে আলী যাকের ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঐ দলে যোগ দেন সারা যাকের যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। ১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।
আলী যাকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ নভেম্বর সকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।