সারিয়া আফরিন স্বর্ণা
ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলো
সারিয়া আফরিন স্বর্ণা
প্রকাশিত: ১৩:০১, ১২ এপ্রিল ২০২২
আপডেট: ১১:৫৪, ১৫ এপ্রিল ২০২২
কালকে আমাদের অনার্স জীবনের শেষ পরীক্ষা ছিলো ভাইবা।যার মাধ্যমে অনার্স জীবনের ইতি টানলাম সবাই।কাল থেকেই ভীষণ মন খারাপ লাগছিলো প্রথম দিকের অনার্স জীবনের কথা ভীষণ মনে পড়ে।তাই ভাবছিলাম অনার্স জীবনের জমে থাকা কথাগুলো আজকে একটু লিখবো।কাল ভাইবা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে আমাদের একদিন প্রস্তুতিমূলক ক্লাস নেওয়া হয় একটা।সুভাষ স্যার সেই ক্লাসে সবচেয়ে বেশি সময় আমাদের সাথে কথা বলেন।স্যার আমাকে বলেছিলেন এই চার বছর অনার্স জীবন কেমন কাটলো তা নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে।ভীষণ ইচ্ছে করছিলো বলতে কিন্তু পারিনাই!আসলে সবার সামনে গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা,তাই লিখেই মনের ভাব প্রকাশ করবো আজকে।
অনার্সে যেদিন প্রথম আমি ভর্তি হতে যাই সেদিন সাথে আমার আম্মুও ছিলেন।অফিস রুম থেকে আমাকে ভর্তি হওয়ার পর মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে যেতে বলা হয়। প্রয়োজনীয় সব ইনফরমেশন জেনে যাওয়ার জন্য। ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করার প্রথমেই তুষার স্যারের সাথে আমার দেখা হয় উনি আমাকে দেখিয়ে দেয় কোন রুমে যাবো।এরপরই দেখা হয় ওইখানে সুভাষ স্যারের সাথে,সেদিন শুধু স্যার না স্যারের সাথে একটা বড় দাদাও পাই।স্যার আমার নাম জিজ্ঞেস করার পর শুনে বলেছিলেন স্বর্ণা নামে স্যারের এক বোন আছেন,আমার আম্মু বলেছিলেন ও তো আপনার বোনের মতোই।সেদিন থেকে আজকে পর্যন্ত স্যার বোন হিসেবেই আমাদের স্নেহ করেছেন সবসময়ই।
এরপর সোমেন স্যারকে প্রথম দেখি একাউন্টিং ক্লাসে।অনার্সে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ বলে একটা প্রোগাম অনুষ্ঠিত হয়।স্যার সেই প্রোগামের সাথে যুক্ত ছিলেন।স্যার আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেন সেই শিক্ষা সপ্তাহ প্রোগামে অংশগ্রহন করার জন্য।আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে আমি,সেতু,সোহান সেই প্রোগামে অংশগ্রহন করি।প্রাইমারি স্কুল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত কোনদিনই পড়াশোনার বাইরে কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করেনি। মনে হতো দিলে পারবো না,লজ্জা পেতাম,ভয় পেতাম।এসব করে কোনদিনই তাই কিছুতে অংশগ্রহণ করা হয়নি।তাই প্রাপ্তির খাতাও শূন্য ছিলো।মাঝেমাঝে মনে হতো কিছু একটা থাকলে মন্দ হতো না।কিছু একটা স্মৃতি তো থাকতো শিক্ষাজীবনের।সেই না পাওয়ার আক্ষেপ টা স্যারের জন্য পূর্ণ হয় আমার।স্যারের উদ্দীপনা,সাহসে সেটা অনেক সহজ হয়ে যায়।পরপর দুবছর অংশগ্রহন করে পরপর আটটা পুরষ্কার আমার মেমোরিতে জমা করার সুযোগ পাই।স্যার অনেক সাপোর্ট করেছিলেন বলেই সেই সুযোগ আমার হয়েছে,মাঝেমাঝে ওগুলো দেখলে ভীষণ ভালোলাগে এখন।এমনকি আমার ছন্দ ছাড়া অমিল কবিতা লিখতেও স্যার আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
আপনার প্রতি স্যার আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো।এমন অনুপ্রেরণাই কয়জনই দিতে পারে!অনেক জ্বালিয়েছি স্যার আপনাকে।আজকে ভীষণ লিখতে ইচ্ছে করছে তাই সব লিখে ফেললাম মনের কথা।
আমাদের ডিপার্টমেন্টের তিনজন স্যারই বেস্ট বেস্ট বেস্ট।আপনারা এভাবে না থাকলে এতো সহজ হতো না আমাদের অনার্স জীবন।আপনারা স্যার কম বন্ধু হয়ে বেশি আমাদের পাশে থেকেছেন,আনন্দ নিয়ে পড়িয়েছেন,এমন মন খুলে উজাড় করে দিতে সবাই জানেনা।আপনারা পারেন স্যার,সবসময়ই এমন থাকেন আপনারা যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনাদের মতো এমন বন্ধুর মতো শিক্ষক জীবনে পায়।কোনো দুঃখ আপনাদের স্পর্শ না করুক সেই প্রার্থনা করি,সবসময় ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আপনারা।আর আমাদের ভুলবেন না প্লিজ,যখন ইচ্ছে হয় আপনাদের জ্বালাতে ঠিকই চলে আসবো।এসে যেনো আপনাদের সেই আগের মতোই পাই সেই আশায়ই থাকলাম।ভালো থাকবেন প্রিয় স্যারেরা।এবার যাদের কথা না বললেই নয়।আমাদের ডিপার্টমেন্টের বেশ কয়েকজন আমরা একটা ব্যাচ করে সেকেন্ড ইয়ার থেকে সুভাষ স্যারের কাছে পড়া শুরু করি।(আমি,পলি,উর্মি,বিল্লাল,সেতু,সোহান,বৃষ্টি,রাজিয়া,রিতু,শান্তা,আসমা,রত্মা,শাহীন)আর তখন আমরা স্যারকে শুধু স্যার না সবসময়ই একজন বড় ভাই হিসেবে পাশে পেয়েছি।স্যার বলার চেয়ে দাদা বলেই বেশি ডেকেছি,কতশত আবদার করেছি সবাই মিলে স্যার সব অকপটে মেনে নিতেন।তার মধ্যে আমাদের সারাদিনের জন্য বোট জার্নি,স্যারের বাসার পিকনিক,একসাথে রত্নার বিয়েতে যাওয়া এই দিনগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে সবসময়ই।আরো এমন অনেক মেমোরি আছে লিখতে চাইলে একটার পর একটা বের হতেই থাকবে।এই বারো জনের থেকে সবচেয়ে বেশি থাকা হতো আমার,পলির,উর্মির।কেননা আমরা হাইস্কুল থেকেই একে অপরকে চিনতাম,ক্লাসমেট ছিলাম তিনজনই।অনার্সে প্রথমদিন ক্লাসে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো যে আমার চেনা কেউ এখানে নাই,একা আমি কিভাবে ক্লাস করবো।এরপরই হঠাৎ একদিন দেখি উর্মি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে,দেখে খুব ভাল্লাগছিলো অন্তত একজন পেলাম আমার পরিচিত।এর বেশ কয়েকদিন পরই পলির সাথে ফেসবুকে কথা হয়,ও নাকি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে মুড়াপাড়া ভর্তি হয়েছে,এটা শুনে ভীষণ ভাল্লাগছিলো।অবশেষে হাইস্কুল জীবনের দুইজন বন্ধুকে একসাথে পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম।এরপর আসি বাকিদের কথায়,সেতুর কথাও ভীষণ মনে থাকবে ও খুব সাপোর্টিভ একটা ছেলে,ভালো কাজে উৎসাহ দিতে জানে।এরপর আরো আছে আসমা,রাজিয়া,রিতু,শান্তা,সোহান,বৃষ্টি,রত্না সবার কথাই ভীষণ মনে পড়বে।তবে আজকে আমাদের এই বারো জনের মধ্যে সবচেয়ে বেস্ট পার্সন বিল্লালের কথা না বললেই নয়। বিল্লালের উপর সবসময়ই প্রচন্ড রাগ হতো আমার,কারণ ও খুব ফাজলামো করতো।তখন না বুঝে আসলে রাগ হয়ে যেতাম।স্যার তখন বলতো অনার্স জীবন শেষে দেখবা তোমারা সবাই ওরেই বেশি মিস করবা!আসলেই তাই!আসলে ও এমন না করলে এতো মজার স্মৃতিগুলো জমা হতো না।
বিল্লালের ভেংচি কাটা এলোমেলো কতশত ছবি,উল্টাপাল্টা নাচ,তালহীন গান,আর সাথে না হাসতে চাইলেও হাসানোর মতো হাজারটা কথা সবই ভীষণ মনে পড়বে।কালও ভাইবা শেষে কি নাচটাই না না নাচলো।ভিডিও করে রেখেছি সেটা।যখন তোমাদের ভীষণ মনে পড়বে,ওগুলা দেখলেই ফিক করে হেসে ওঠবো।জানিনা আবারো আমরা সবাই কবে একসাথে হবো,তবে তোমরা কেউ কাউকে ভুলোনা প্লিজ।সবসময় এমনই থেকো।এরকমই রেখো মনটা,যাতে দেখা হলেই আগের মতো খুনসুটি শুরু হয়ে যায় আমাদের মধ্যে।বাকিদের কথাও না বললেই নয়।আমরা ঠিক কতজন অনার্সে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে দ্বিতীয় ব্যাচ হিসেবে ভর্তি হই মনে নাই।তবে ফাইনালি শেষ পর্যন্ত ষাট জন পরীক্ষা দেই।এদের মধ্যে কমবেশি সবার সাথেই কথা হয়েছে।অনার্স ফাস্ট ইয়ারে রেগুলার ক্লাস করায় অনেকের সাথেই পরিচয় হয়,সহপাঠী হিসেবে তোরা সবাই খুব ফ্রেন্ডলি।এদের মধ্যে তুলি,সিয়াম,সবুজ,মরিয়ম,শাকিলা,তানভীর ওদের সাথে ফাস্ট ইয়ারে কথা হতো,তখন রেগুলার ক্লাসে যেতাম।আরো অনেকেই আছে নাম মনে পড়ছে না এখন।বাকিদের সাথেও টুকটাক কমবেশি কথা হয়েছে।তোমরা সবাই খুব আন্তরিক,বন্ধুত্বপূর্ণ।লিখতে চাইলে আরো অনেক কিছু লিখতেই ইচ্ছে করবে,তাই আজ আর না লিখি!আমার এতো বড় লিখা কেউ পড়বে কিনা জানিনা!তবে মনের কথাগুলো আজকে না লিখে পারলাম না,পুরো অনার্স জীবনের একটার পর একটা কতশত স্মৃতি কাল থেকে ভীষণ মনে পড়ছে।তাই ফেসবুকেই লিখে রাখলাম,যাতে ফেসবুুক মেমোরি বছর বছর মনে করিয়ে দেয় সেসব স্মৃতিগুলো।
সবশেষে তোমারা সবাই খুব ভালো থেকো,
সবার জীবনে সফলতা আসুক,শুভকামনা থাকলো।
আবারো একসাথে হবো আমরা সবাই সেই অপেক্ষায় রইলাম।ভালো থাকো প্রাণের ক্যাম্পাস,প্রাণের ডিপার্টমেন্ট।