ডাঃ মেহবুব হোসেন ও বিবেকবার্তার সম্পাদক পি আর প্ল্যাসিড
বরাবরই আমি একজন লেখক হবার স্বপ্ন দেখি। আর এজন্যই যারা লেখালেখি করেন তাদের সান্নিধ্য পাবার ইচ্ছে লালন করি। এমনকি কোথাও কোনো লেখকের আগমন সংবাদ পেলে ছুটে যাবার চেষ্টা করি।আমার বাবা একটা কথা বলতেন, এলেমে হেলেম বাড়ে বুদ্ধি বাড়ে মেলে। যার অর্থ তিনি বলতেন, বিভিন্ন জনের সাথে আড্ডা দিলে নানাজনের কথা থেকে অনেক কিছু শোনা ও জানা যায়। এতে নিজেরও জ্ঞান ভান্ডার বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি ভুলিনি বলেই নানা জনের সাথে আড্ডা দেবার চেষ্টা করি সময় এবং সুযোগ পেলেই।
২০২২ সালের একদম শেষ প্রান্তে এসে এমনই এক আড্ডায় মেতে ছিলাম গত ২৮ শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। স্থান, জাপানের রাজধানী টোকিওর ব্যাস্ততম এক শহর আকিহাবারায়। আগেই উল্লেখ করেছি, যেখানেই কোনো সাহিত্য প্রেমিক বা সাহিত্য অনুরাগীর সন্ধান পাই সেখানে চেষ্টা করি তখন ছুটে যেতে, আড্ডা দিতে। এটা আমার জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। পুরোনো দিনের অভ্যাস। এটাকে আমার একধরনের পাগলামীও বলতে পারেন। মাঝখানে নানাবিধ কারণে কিছুদিন এসব পাগলামী থেকে বিরত ছিলাম, এই যা।
এবারের আড্ডার পটভূমি ছিলো এমন, ২৮ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে কথা হলো আমার আড্ডার পার্টনার ডাঃ মেহবুব হোসেন এর সাথে। তিনি জানালেন তার টোকিও আাসার কথা। এসে আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি ওয়াদা করলাম তাকে সময় দেবার। আমার জন্য এটা খুশীর সংবাদ, তাই।
২০০৩ সাল থেকে তিনি বসবাস করছেন জাপানের ইয়ামাগুচি প্রিফেকচারে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে শুরু করেছেন শিক্ষকতা করা। জাপানের ইয়ামাগুচিতে প্রিফেকচারেই পি এইচ ডি করেছেন অকোপেশনাল হেল্থ এর উপর। ডাঃ মেহবুব হোসেন পাবলিক হেল্থ এন্ড প্রাইভেট মেডিসিন বিভাগের একজন এসোসিয়েট প্রফেসর।
টোকিওর কাছাকাছি জেলা চিবায় তার এক ছেলের বসবাস। ছেলে চিবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বছর শেষে তার সাথে সময় কাটাতে দুপুরের বিমানে চড়ে ডাঃ মেহবুব হোসেন চলে এসেছেন টোকিও। এসেই ফোন দিলেন আমাকে। আমরা দেখা করলাম জাপানের সবচেয়ে বড় ইলেক্ট্রোনিক্স মার্কেট আকিহাবারায়।
ডাঃ মেহবুব হোসেন ২০২১ সালে একটি বই লিখেছেন। নাম, হজ্জ ও উমরাহ্ (সহজ ব্যাখ্যা এবং স্বাস্থ্যকথা)। বইটি বিবেক পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ করার প্রস্তুতি চলছে। আগামী বছর তার এই বইয়ের কাজটিকে আরো সুন্দর করতে হজ্বে যাবার পরিকল্পনা করছেন বলে জানালেন। সেখানে সম্প্রতি করোনা কালের পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন নিজের চোখে দেখে আসার পর বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণে যোগ করবেন বিষয়গুলো। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তীতে নতুন বই প্রকাশ করার কাজও এর মধ্যে প্রায় সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো জানালেন, জাপান আসার আগে থেকেই দেশে লেখালেখি করেন। জাপানে শত ব্যস্ততার মাঝেও লেখালেখি করাটা যেন তার অনেকটা দ্বায়িত্বের মধ্যে পরে গেছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখন নিয়মিত লিখছেন। দেশের বিভিন্ন পত্রিকাতেও প্রকাশ হচ্ছে তার ওসব লেখা। একসময় লেখালেখির জন্য সেবা প্রকাশনী থেকে সম্মানি পেতেন তিনি। আড্ডায় তার লেখালেখির পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করেছেন।আগামী বই মেলায় তিনি দেশে থাকার কথা ব্যক্ত করে বলেছেন, আমি চেষ্টা করবো বিবেক পাবলিকেশনের স্টলে যাবার, যদি এবার স্টল বরাদ্দ পান।
লেখালেখি, চাকরি করার পাশাপশি ধর্মীয় কাজ নিয়েও ইদানীং বেশ ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন ডাঃ মেহবুব হোসেন। জাপানে তার এলাকায় তিনি একটি মসজিদ নির্মানের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি এই মসজিদের কাজে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে ফান্ডের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বেশ জমে উঠেছিল আমাদের প্রথম দেখার প্রথম আড্ডা। সাথে ছিল আমার জাপানি বধূ, খামিজো ইউকি। সে-ই আমাদের প্রথম দেখার বিষয়টি স্মরণিয় করে রাখতে মোবাইলে ছবি তোলে সহায়তা করেছে যা এই লেখার সাথে দেখছেন।