কবি : হেনরী স্বপন
সাহিত্যের সবচেয়ে স্পর্শকাতর শাখা হিসেবে কবিতার আলাদা কদর সবার কাছেই অনন্য। তাই যেকোনো পুরস্কারের ক্ষেত্রে কবিতায় পুরস্কার কে পেলেন, সেই আগ্রহও সবার মধ্যে একটু বেশিই থাকে।
তেমনি কবিতা শাখায় কে পাচ্ছেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, তা নিয়ে এবারও অনেকের মাঝই ছিল ব্যাপক কৌতুহল, উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা।
কিন্তু সকল উৎণ্ঠা পেরিয়ে এবার কবিতায় চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য কবি হেনরী স্বপনকে মনোনীত করা হয়েছে। এই বছরও ৮ জন পেলেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার।
শনিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর শহরের কস্তুরি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন চর্যাপদ একাডেমির মহাপরিচালক রফিকুজ্জামান রণি।
পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, কবিতায় হেনরী স্বপন, কথাসাহিত্যে পলাশ মজুমদার, গবেষণা সাহিত্যে রকিবুল হাসান, প্রবন্ধে পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, অনুবাদে মাসুদুল হক, শিশুসাহিত্যে হুমায়ূন কবীর ঢালী, কারুশিল্পে সমীরণ চন্দ্র দত্ত ও সংগঠনে সুমা ভৌমিক।
উদযাপন পরিষদের আহবায়ক সজীব মোহাম্মদ আরিফের সভাপতিত্বে ও জুড়িবোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী শিউলী মজুমদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন একাডেমির সভাপতি নুরুন্নাহার মুন্নি, সহ-সভাপতি আয়শা আক্তার রুপা, নির্বাহী পরিচালক আইরিন সুলতানা লিমা, প্রচার ও প্রকাশনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম এবং নির্বাহী সদস্য কামরুন্নাহার বিউটি।
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির সভাপতি নূরুন্নাহার মুন্নি বলেন, আগামী ১৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় চাঁদপুর রোটারি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
কবি হেনরী স্বপন। ১৯৬৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছেন এই কবি। এ-পর্যন্ত তার ৮টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছেঃ ‘কীর্তনখোলা’, ‘মাটির বুকেও রৌদ্রজ্বলে’, ‘বাল্যকাল ও মোমের শরীরে আগুন’, ‘জংধরা ধুলি’, ‘ কাস্তে শানানো মোজার্ট’, ‘ঘটনার পোড়ামাংস ‘, ‘হননের আয়ু’, ‘উড়াইলা গোপন পরশে’ শ্রেষ্ঠ কবিতা, মৃত মুনিয়ার মত, আলপথ দূরে, এবং অম্মাজান
সম্পাদনা করছেন ছোটকাগজ ‘জীবনানন্দ’। তার কবিতা সম্পর্কে ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান: হেনরী স্বপন’ শীর্ষক প্রবন্ধে কবি-প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হক লিখেছেন, ‘ক্রিয়াপদ ও অব্যয়হীন শব্দ গঠন ও নির্বাচন, বাক্যের বুননের কারণে তাঁর কবিতাকে দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে। এ কারণেই সাধারণ পাঠককে খুব বেশি কবিতা পাঠে উৎসাহিত করে না।
এ স্বভাব তাঁর মজ্জাগত। এ সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবির সমাজ-মানসগঠনের ক্ষেত্রে আভিজাত্যের মোহ। হেনরী স্বপন কবিতা লিখেছেন হৃদয়ের ক্ষরণ থেকে, কিন্তু প্রকাশ করেছেন মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণে। সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-দর্শন অনেকের কবিতারই অনুষঙ্গ হয়েছে।
কিন্তু হেনরী স্বপনের কবিতায় এসব এসেছে দার্শনিক প্রত্যয় নিয়ে। এ কারণে তাঁর কবিতা ভাবালুতায় ভেসে যায়নি, হয়ে উঠেছে সময়ের কাছে মনীষার দান।
যে মনীষা ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রকে ধারণ করে বিশেষ তাৎপর্যে, বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে একটি মস্তবড় বিস্ময়সূচক চিহ্ণের মতো।’ বড় ধরনের কোনো ব্যতিক্রম না ঘটলে কবিতার গভীরতা, বিষয়ের বৈচিত্র্য ও সমকালীন সাহিত্যে তার প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় কবিতা শাখায় এবার চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য কবি হেনরী স্বপনকে মনোনীত করেছে এ পুরস্কার সম্পর্কে একাডেমির মহাপরিচালক রফিকুজ্জামান রণি বলেন, আগামী শনিবার পুরস্কার প্রদানের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে একটি উপ-কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সভাপ্রধান সজীব মোহাম্মদ আরিফ বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের উপস্থিতিতে ১৯ নভেম্বর সকালে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সাল থেকে ‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’ নিয়মিত প্রদান করে আসছে। তপন বাগচী, শাহেদ কায়েস, ফারহানা রহমান, মিলু শামস, সৈয়দ শিপুল, অদ্বৈত মারুত, রহমান হাবিব, স্বরূপ রতন দত্ত, বীরেন মুখার্জী, হামিদ কায়সার, জামসেদ ওয়াজেদসহ দেশের অনেক গুণী লেখক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।’