শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৭ ১৪৩১

প্রকৃতি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে

নাসরীন রোজী

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০৮:৩৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রকৃতি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে

নাসরীন রোজী

আত্মবিশ্বাস না থাকলে জীবনকে উপভোগ করা, এগিয়ে যাওয়া কঠিন! আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কৌশল..পছন্দের পোশাক পরুন। পোশাকটি হতে পারে আপনার প্রিয় রঙের, আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দ্যের অথবা প্রিয় কোনো স্মৃতির। এমন পোশাকও আপনাকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। নিজের পছন্দে পোশাক পরুন। জীবনের পথ সব সময়ই কঠিন। এর ভেতরেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী রাখুন। জীবনে সব মানুষের কাছ থেকে আপনি সবকিছু আশা করতে পারেন না। আবার সবকিছুই যে ইতিবাচক ঘটবে, এমনও নয়। কিন্তু আপনি নিজের উদ্দীপনা হারাবেন না। ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা নিজে গুছিয়ে রাখুন।বলা হয়, আপনি যদি বিশ্ব বদলাতে চান,সকালে নিজের বিছানা গোছানো দিয়ে শুরু করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করুন,এর কোন বিকল্প নেই।

নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আত্মবিশ্বাসহীনতার মূল কারণ। তাই যারা এমন ধারণা পোষণ করে, এমন মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকুন। তবে নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে নিন। নিজেকে প্রতিনিয়ত শোধরানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের ভুলগুলো সবার আগে স্বীকার করা।এরপর সেগুলো সংশোধনে উদ্যোগী হওয়া।আপনি যখন নিজের দোষত্রুটি আর গুণ সম্পর্কে সচেতন, তখন আপনার মনোবল ভেঙে ফেলা কঠিন। মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কাছের মানুষ, বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। প্রিয়,কাছের মানুষেরা প্রাণশক্তি দেয়। সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণাও আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

মনোবিদগণ মনে করেন, প্রকৃতি আত্মবিশ্বাস যোগাতে খুবই সাহায্য করে। সবুজের মাঝে থাকলে মন ভালো থাকা সেটা আত্মবিশ্বাসের জন্য উপযোগী।তাই সময় সুযোগ করে প্রকৃতির মাঝে ডুব দিন। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো, অন্যকে সাহায্য করা।আপনি যতই অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হবেন, সেটা আপনার মনোবল বাড়াবে,এবং সব সংকীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে কাজ করা সহজ হবে।সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরী সামাজিক সময় খুবই মূল্যবান।এমনকি সম্পদ থেকেও। আপনি চাইলে হয়তো আরও সম্পদ উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু আরও সময় পাবেন না। তাই কাউকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবেন না।তুলনামূলকভাবে আপনার চেয়ে দরিদ্রদের মাঝে কখনো নিজের ধন সম্পদের বিষয়ে কথা বলবেন না। এমনকি যাঁরা নিঃসন্তান তাঁদের সামনে নিজের সন্তান নিয়ে কথা বলবেন না। মোদ্দাকথা হলো, আপনার কথা যেন আপনার নীরবতার চেয়ে শ্রেয় হয়। আপনার কথায় যেন কেউ কষ্ট না পান।সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।সামাজিক জীব হিসেবে আমরা যদি কিছু নিয়মরীতি মেনে চলতে পারি। উইনার আইডিয়াগুলো অলিখিত সামাজিক নিয়মের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। আপনারাও যা কাজে লাগতে পারেন। এগুলোই আসলে‘কমনসেন্স’।

কেউ যদি আপনার ফোনকল রিসিভ না করে তবে খুব জরুরি কারণ ছাড়া তাঁকে দুবারের বেশি কল করবেন না।খুব জরুরি কারণ হলে একটা বার্তা পাঠিয়ে রাখতে পারেন। যাঁকে ফোন করছেন তিনি ঘুমিয়ে থাকতে পারেন,অসুস্থ থাকতে পারেন কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন।

পারতপক্ষে কারও কাছ থেকে টাকা ধার করবেন না। নিতান্তই যদি কারও থেকে টাকা ধার নেন, তবে সেটা তিনি চাওয়ার আগেই পরিশোধ করুন। যখন কেউ আপনাকে বাইরে খাওয়ান, তখন মেনু থেকে দামি খাবার অর্ডার করবেন না। আপনিও পরবর্তী সময় তাঁকেএকদিন খাওয়ান।

কোনো কাজই ছোট নয়। সব মানুষকে সমান চোখে দেখুন,সমানভাবে মূল্যায়ন করুন। বাসায় কাজে সহায়তাকারী, দারোয়ান,ড্রাইভার কিংবা যাঁরা আপনাকে সেবা দিচ্ছেন, তাঁদেরকেও সম্মান করুন, যেভাবে আপনি আপনার অফিসের ম্যানেজার কিংবা সিইওকে সম্মান করেন। সবার কাজই গুরুত্বপূর্ণ। বস দুই দিন অফিসে না এলেও চলে, তবে বাসার সহকারী দুই দিন কাজে না এলেই আপনি সেটা টের পান। সর্বদা আপনার আশপাশে মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, হোক সে ছেলে বা মেয়ে, সিনিয়র কিংবা জুনিয়র। জনসাধারণের সামনে কারও সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে আপনি ছোট হবেন না।

বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ট্যাক্সিতে চলাফেরা করলে সে ভাড়া দিলে পরবর্তী সময় আপনি ভাড়া দেবেন। ভিন্ন মতামতকে সম্মান করুন। মনে রাখবেন আপনার কাছে যদি কোনো কিছু ইংরেজিতে ছয় মনে হয়, আরেকজনের কাছে সেটি ইংরেজিতে নয় মনে হতেই পারে। কারও কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। তাঁর কথা আগে শেষ করতে দিন। তারপর আপনি বলুন।

যদি আপনি কারও সঙ্গে মজা করেন আর অন্যজন সেটা অপছন্দ করেন, তবে পুনরায় সেই জাতীয় মজা আর কখনো করবেন না। কেউ আপনাকে সাহায্য করলে সেটা মনে রাখুন, কৃতজ্ঞ থাকুন,তাঁকে ধন্যবাদ দিন। কথা দিলে কথা রাখবেন। যেটা পারবেন না, সেটার প্রতিশ্রুতি দেবেন না।

কেউ যদি আপনাকে গোপন কিছু বলে তবে সেটি আপনার মধ্যেই গোপন রাখুন। এমনকি পরের দিন যদি মানুষটির সঙ্গে আপনার শত্রুতার সম্পর্কও সৃষ্টি হয় তারপরও তাঁর গোপন কথা গোপন রাখুন। যখনই আপনাকে কেউ তাঁর ফোনে একটি ছবি দেখান, তখন আপনি নিজে সেই ফোনের বাঁ কিংবা ডানের ছবি দেখতে যাবেন না।কারণ, ডানে বা বাঁয়ে কি ছবি আছে, তা আপনার অজানা। আর সেটি দেখার জন্য আপনার অনুমোদন নেই।

উইনার আইডিয়াগুলো সবার জন্য.. একাধিক আয়ের উৎস রাখুন। নিদেনপক্ষে একটা বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন, আগেই সেই ব্যবস্থা করে রাখুন। সব সময় যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, তা নয়। তবে আপনার কাজের একটা নিজস্ব গতি থাকতে হবে।আর সব কর্মকাণ্ডের ভেতর সংগতি থাকতে হবে। আপনার যা কিছু আছে, নিজের চাহিদা তার ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখুন।স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।কখন ‘গিভ আপ’ করতে হয়, এটিও জানুন।কোনো কিছুই সারা জীবন থাকে না। গুড,ব্যাড, আগলি— সবকিছুকেই সহজভাবে নিন। জীবনে ভালোবাসার প্রয়োজন আছে।ভালোবাসার মানুষদের ঘিরে থাকুন। হারাতে দেবেন না।

আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, বিষয়গুলো জানা থাকলে তো আর ক্ষতি নেই। বরং কখনো না কখনো কাজে লেগে যেতেই পারে।সম্পদের চেয়ে স্বাস্থ্য বড়। তাই স্বাস্থ্য আর সম্পদ কখনো মুখোমুখি এসে দাঁড়ালে স্বাস্থ্যকে এগিয়ে রাখবেন। আর সবার ওপরে চরিত্র। কথায় বলে, সম্পদ হারালে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য হারালে কিছুটা পাওয়া যায়। চরিত্র হারালে আর পাওয়া যায় না। শিক্ষা খাতে ব্যয় করুন। ‘আত্মোন্নয়ন’ খাতে‘বিনিয়োগ’ করুন। আত্মোন্নয়নের বিকল্প নেই। সব সময় জরুরি পরিস্থিতির জন্য অর্থ জমা রাখুন। ৯১ বছর বয়সী মার্কিন বিজনেস ম্যাগনেট ওয়ারেন বাফেটের মতে, আগে সঞ্চয় করুন। তারপর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, সেখান থেকে ব্যয় করুন। একাধিক আয়ের উৎস রাখুন।নিদেনপক্ষে একটা বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন,আগেই সেই ব্যবস্থা করে রাখুন। কারোর সঙ্গে কারোর তুলনা হয় না। তাই নিজেকে বা নিজের সন্তানকে কারোর সঙ্গে তুলনা করবেন না। কেউ কারও মতো নয়। সবাই তাঁর নিজের মতো। ব্যর্থতা জীবনেরই অংশ।ব্যর্থতাকে মেনে নিন। কোনো মানুষই ব্যর্থতাকে সঙ্গী না করে সফল হননি। তবে হাল ছাড়বেন না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। একাধিক আয়ের উৎস রাখুন।নিদেনপক্ষে একটা বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন,আগেই সেই ব্যবস্থা করে রাখুন।