গোলাম রববানী
আমরা প্রতিদিন কতকিছুই না লিখি। কবিতা লিখি। প্রবন্ধ লিখি।উপন্যাস লিখি।গল্প লিখি।ভ্রমণকাহিনী লিখি। জীবনীগ্রন্থ লিখি।আত্মজীবনী লিখি।গান লিখি।কল্পকাহিনি লিখি।ধর্মগ্রন্থ লিখি।চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখি। নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখি।
কেউ প্রেম বিষয়ক, কেউ বিরহ বিষয়ক,কেউ নৈতিকতা অবক্ষয় বিষয়ক, কেউ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, কেউ রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি বিষয়ে লিখি। কেউ কেউ আবার সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে লেখালেখি করি।কেউবা মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য লিখি।অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখি।সড়ক দুর্ঘটনা, ধর্ষণ,পুরুষ নির্যাতন নির্মূলের জন্যও লিখি।তবে নারী নির্যাতন নির্মূলেও লেখা হয়।ন্যায্য বিষয় প্রাপ্তির জন্যও লেখা হয়।অন্যায্য বিষয়টি-ই কপালের টিপ হয়ে যায়!তাৎক্ষণিক কপালের দোষ দিয়েই কী রেহাই পেয়ে যায়? কথা না বাড়ানোয় ভালো; উচিত কথা বললে মামা বেজার হবে-আমার চাকরি চলে যাবে! সুন্দর তুমি সুন্দরভাবে হেঁটে যাও।
মদ্দাকথা হচ্ছে এতো লেখালেখি করে হচ্ছেডা কি? লেখালেখি করলেই কি সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়?সমাজ, সংসার, পরিজন, প্রতিবেশী এমনকি বিশ্ব দুনিয়া পরিবর্তন করা কী এতোই সহজ! বিবেকবোধ, চিন্তাভাবনা আগে পরিবর্তন করা জরুরী। কতটুকুই বা পরিবর্তন হচ্ছে কে জানে? ভেতরের অমানুষিক বোধ নিঙড়ানো দরকার নই কী!বাহিরে এতো সাজগোছ পরিপাটি দিয়ে হবে কী! আমরা জানি আলো জীবনের জন্য ভালো।আলোর ভেতর যে এতো কালো অন্ধকার লুকিয়ে সেটা দেখতে হলে কাঠের চশমা পরে থাকলে তো দেখা অসম্ভব।
জগতে কানারা বেশি দেখে, বোবারা কানে বেশি শোনে কথাগুলো অনাদিকাল থেকে সত্য।এখনো সত্য,অতীতেও সত্য ছিলো এবং ভবিষ্যতেও সত্য হবে। হৃদয়চোখ এবং শ্রবণেন্দ্রিয় তাদের এতোটাই স্বচ্ছ সুন্দর যেটা অকপটে স্বীকার করাও বাঞ্ছনীয়।কারণ, যারা অন্ধ না তারা ভালো দেখে না; যারা শুনতে পারে ভালো তারা আসলে এতোটা শোনে না!আমরা সবাই বুঝি কিন্তু অবুঝ!আমরা সবাই দেখি কিন্তু নিশ্চুপ! অবুঝ আর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলে যা যাবার তাতো হবে।এটা অপ্রত্যাশিত বলাও সমীচীন হবে না বোধহয়! তাই বলি আমরা যারা লেখক এতো লিখে হবেডা কি? যতই তোমরা সালিশ করো না কেন তাল গাছটা আমার।বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে কচুপোড়া! ঘর ঠিক না-ই আমরা প্রতিবেশীর নিয়ে পড়ে আছি; কে কি করলো না করলো! আমার ঘর একটা,রুম একটা, থাকতে পারি দুই একজনকে নিয়ে কিন্তু না! আতিথেয়তার জ্বালায় মরছি! খাল কেটে কুমির এনে বলছি কুমির খুব খারাপ! মরণ! মরণ!
আমরা সবাই জানি, " মানুষ মানুষের জন্য।" কিন্তু কিছু কিছু মানুষ মানুষের উপকারে আসে আর কিছু কিছু মানুষ মানুষের উপকারে আসে না।তারা ক্ষতির চিন্তায় মশগুল থাকে।স্বার্থের বেড়াজালে আটকে থাকে।তাই বলে কী মানুষ মানুষকে হত্যা করবে?
মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে? কেনমানুষ মানুষকে গোলামী করে রাখবে?মানুষ কিভাবে এতো বিবেকহীন হতে পারে? ক্ষমতা কিছুই না, অক্ষমতাও কিছু না; শুধু ব্যবহারের মানদণ্ড - এক অদৃশ্য শক্তি!
তা-ই বলি আগে আমরা নিজেরা বাঁচার মতো বাঁচতে শিখি; পরে স্বজন,পরিজন কিংবা অন্যকিছু নিয়ে ভাবি। নচেৎ যে চিপায় পড়ে গেছি তা থেকে পরবর্তীতে উদ্ধারের নামে অপচেষ্টা চালানোর সামিল হবে।সময় থাকতে বান্দা হও হুশিয়ার! নইলে সমস্ত কলকব্জায় জং ধরে যাবে তখন গ্যালভানাইজিং করেও জং ওঠানোর উপায় থাকবে না আর।
আজকাল গণমাধ্যমগুলোতে চোখ রাখতে পারি না।চোখ রাখলেই চোখ ঝলসে যাই। অনিয়মে, ধর্ষণে, দুর্ঘটনায়, ক্ষমতার অপব্যবহারে; পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার মোহনীয় অবক্ষয়ের ছলচাতুরীয় বাহানায়, স্বজনের হাতে স্বজনের মার্ডারের নিউজে, অপ্রাসঙ্গিক খবরাখবরে আমজনতার আজ বমি হয়। ভাইরাল নামক ফাউল শব্দটিতে নির্লজ্জতার বালাইষাট! নির্ভাবনার বালুচরে ডুবে মরতে ইচ্ছে করে।উন্নয়নের সাঁকোতে চড়ে হাওয়া খেলে ইচ্ছে করে।মাকাল ফলের মতো অন্তঃসারশূন্য বিশ্বে আমার নিজেকেই মেরুদণ্ডহীন জড়পদার্থ লাগে।
এতো লিখে আর কী হবে! লেখকদের লেখালেখির বিচার-বিশ্লেষণ, আলোচনা, পর্যালোচনা,গবেষণা, চিন্তাভাবনা কাগজেই লেপটে থাকে! তার কতটুকু মূল্যায়ন হয় বা জনগণের কাজে লাগে কে জানে?আমার জানা নেই! বুদ্ধিজীবীদের কতটুকু জানা আছে কে জানে!
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা মহাবিশ্ব সুশৃঙ্খল জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের মতো লেখকদেরও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।কিন্তু, ক্ষমতাসীনদের অবারিত বিচরণ তথা কলমে শেকড়ের বেড়ী পরানোর কারণে বাকস্বাধীনতার হৃতসর্বস্ব হরণ করা হচ্ছে বিশ্বসংসারে- গণমাধ্যমসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে, লেখক,সাংবাদিক, কবি,সাহিত্যিক এবং নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত নয় এমন রাজনীতিকদেরকেও।আমরা সবাই নষ্ট সময়ের পিঠে চড়ে চলেছি।জানি না এর শেষ কোথায়! জানি না এর শেষ কবে হবে।তাহলে কি এভাবেই চলতে থাকবে? এতো লিখে আর কি হবে?