শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৭ ১৪৩১

বাবার নমনীয়তা, দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গিই আমার জীবনের সর্ববৃহৎ শেখা

নাসিমুজ্জামান সুমন

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ০৯:৩৬, ১৫ এপ্রিল ২০২২

বাবার নমনীয়তা, দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গিই আমার জীবনের সর্ববৃহৎ শেখা

ছবিতে লেখকের বাবা

বন্ধু বন্ধু ব্যাপাআব্বার সাথে আমার সম্পর্ক বরাবরই দারুণ। বন্ধু বন্ধু ব্যাপার।রটা অনুভব করতে পারি যখন ক্রমশই বড় হয়ে উঠতে থাকি। বড় বলতে বড়জোর ইন্টারমিডিয়েট। সেথেকে আরও বড় হয়ে উঠতে উঠতে, আরও আরও বন্ধু হয়ে উঠতে উঠতে দেখি আব্বা এখন বার্ধক্যের ঘরে। অসুস্থ।

সে অনেক আগের কথা। গ্রাম থিয়েটারে অভিনয়ে, ডিরেকশনে আব্বার দখল ছিলো প্রশংসনীয়। আমার দেখা মতে, মঞ্চ ছাড়াও জীবনের কাছে আব্বা যেন এক অপার শিল্পী ছিলেন। আব্বা মদ খেতেন। মাতাল হয়ে ফিরতেন প্রায়শই। যখন ফিরতেন, নাটকের সংলাপে মুখর হয়ে যেত আমাদের নিশুতি বাড়ি। কখনো কখনো সংলাপ, কখনো ঝুমুর গাইতেন অনর্গল।

মদ খাওয়াকে যদি আপত্তি ধরা চলে, তা ছাড়া যেকোনো বিচারেই আব্বা অনবদ্য। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বিচারে জীবনবোধের উদাসীনতাকে আমার আপত্তি মনে হয়নি কখনো। তাই তাঁর এই অনবদ্য জীবনে আমি আপত্তি তোলার মতো কিছুই পাইনি কোনোদিন। ফলে ‘এমতো আব্বা’ পাওয়া এবং আপত্তি না তোলার বোধ তৈরি হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়।

সন্তানকে ‘মানুষ’ করতে আব্বাকে কখনো বিশেষ কোনো উপদেশ দিতে দেখিনি। সন্তান হিসেবে জীবনবোধ বিষয়ে তিনি আমাকে আঙ্গুল দিয়ে শেখাননি কিছুই। এমনকি তিনি কোনোদিন কোনো ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করেননি আমার ওপরে। বোধকরি, তাঁর এই নমনীয়তা, এই দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গিই আমার সমস্ত জীবনের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ শেখা।

বেশকিছুদিন হলো আব্বা অসুস্থ। বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিয়েও ভালোই ছিলেন মোটামুটি। সম্প্রতি তাকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে হলো বিনাদোষে। আমি জানি এর আদ্যোপান্ত- কেন, কী, কিভাবে, কোন আক্রোশে?

সংলাপে-গানে মুখর সেমানুষ আজ কথা বলার চেষ্টা করেও গড়তে পারে না শব্দের পিঠ। মুখ থেকে আওয়াজ আসে, আসে কথা বলার ব্যাকুলতা। শব্দ আসে না। আমি জানি এর আদ্যোপান্ত- কেন, কী, কিভাবে, কোন আক্রোশে?

সব ছেড়ে তাই আশায় আছি- আবার মুখর হবে আব্বার মুখ, গানে গানে-সংলাপে-কথায়…

 

আর এ