শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৭ ১৪৩১

পেলে ফুটবলের রাজা, মহারাজা নয়

আহমেদ রশিদ জয়

প্রকাশিত: ১১:০০, ২১ ডিসেম্বর ২০২২

পেলে ফুটবলের রাজা, মহারাজা নয়

১৮ই ডিসেম্বর ২০২২ এ ফুটবলের মহারাজার রাজ্যাভিষেক হয়েছে

ছোটবেলায় বাংলা বইয়ের মাধ্যমে পেলের সাথে আমাদের পরিচয়। "ফুটবলের রাজা" পেলে, ৩ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলের সদস্য, ১২৭৯ গোল দিয়ে (ফ্রেন্ডলি সহ) গিনিস বুকে যার নাম। আসলে পেলের খেলা আমাদের বাপ-চাচারাও ঠিকমত দেখে নাই। রেকর্ড বুকের মাধ্যমে পেলের সাথে আমাদের পরিচয়।

এরপর দিয়েগো মারাদোনা। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার বিশ্বয়কর জোয়ার আমরা দেখেছি। বিশ্বকাপ আর গোল্ডেন বল জিততে দেখেছি। 'গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরি' দেখেছি, 'হ্যান্ড অফ গড' দেখেছি। ৯০ আর ৯৪ তে ম্যারাদোনাকে কাঁদতে দেখেছি। ইতালির নেপলিকে চ্যাম্পিয়ন বানাতে দেখেছি।

সহস্রাব্দ উপলক্ষে ফিফা পেলে আর ম্যারাদোনাকে যুগ্মভাবে Players of the Century ঘোষনা করে। পেলে আর ‌ম্যারাদোনা আসলে তাদের নিজ নিজ দেশে ঈশ্বর সমতুল্য।

এদিকে আমাদের নতুন সহস্রাব্দে নতুন দুই মহাতারকার আবির্ভাব ঘটে, লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর। ইনস্টাগ্রামে রোনাল্ডোর ফলোয়ার সংখ্যা ৫৮ কোটি দেখলে বুঝা যায় গ্লোবালি এদের ইম্প্যাক্ট কেমন। আমার ছেলে সহ বিশ্বের কোটি কোটি কিশোর রোনাল্ডোর ভক্ত। মেসির ভক্ত।

বিশ্বকাপ জেতার আগ পর্যন্ত মেসির অর্জন ছিল; আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিক গোল্ড মেডেল, কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন, কোপা রানার আপ ৩ বার, বিশ্বকাপ রানার আপ, গোল্ডেন বল, ল্যা ফিনালিসিমা, ৭ বার ব্যালন ডি অর, ২ বার ফিফা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার, ফিফা ওয়ার্ল্ড ক্লাব কাপ, ৪ বার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ১০ বার লা লিগা, ১ বার লীগ ওয়ান। বাকি গুলো উল্লেখ করলাম না। মারাদোনা কখনো কোপা জিতে নাই, সে কখনো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নক আউট স্টেজ পার হয় নাই। আর্জেন্টিনার হয়ে মারাদোনার গোল ৩৪টি, মেসির ৯৮। আর্জেন্টিনার প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার উপাধি মেসি পেয়েছে ১৪ বার, মারাদোনা পেয়েছে ৪ বার। পেলে কখনো বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ক্যাপ্টেন ছিল না, তার অফিসিয়াল ৭৫৭ গোলের রেকর্ড অনেক আগেই ভেঙে দিয়েছে মেসি আর রোনালদো। ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে ২ খেলায় ১ গোল করেছে, ৭০ এর বিশকাপেও পেলে গোল করেছে ৪টি। বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল মূলত দলগতভাবে। মেসি জীবনে যতগুলো ম্যাচ খেলেছে তার ৫২% এ সে পেয়েছে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ পুরষ্কার।

মেসির অর্জনের যাবতীয় তথ্য দিয়ে, তুলনা করে তাকে সবার চেয়ে বড় করে দেখানোর চেয়ে তার ইম্প্যাক্ট দেখাটা বেশি জরুরী। আর্জেন্টিনার মত দলের ট্রফি না পাওয়ার ভার নিয়ে ক্যাপ্টেন হিসেবে ম্যাচের পর ম্যাচ গোল দিয়ে, ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়ে টিমকে খাদের কিনার থেকে টেনে এনে বিজয়ী করেছে মেসি। বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে মহাপরাক্রমশালি দুইজনের একজন মেসি। ব্যক্তি জীবনে মেসির কোন কলঙ্ক নেই। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি শিশুর রোল মডেল হচ্ছে মেসি। মারাদোনা একটি আবেগের নাম। মারাদোনা রোল মডেল নয়। পেলে ফুটবলের রাজা, মহারাজা নয়।

বিশ্বকাপের আগে মেসির মুকুটে সব ছিল, স্যাফায়ার, ব্ল্যাক রুবি, সোনা, হীরা, প্লাটিনাম সব কিছু।  তারপরেও মেসিকে মহারাজা বলা হয়নি। ওকে বলা হয়েছে, 'তোমার মুকুটে কোহিনূর কই? কোহিনূর লাগানো মুকুট পর তবেই তুমি মহারাজা।' এই কোহিনুরই হচ্ছে সেই বিশ্বকাপ ট্রফি। সেটাও সহজ ছিল না। The Greatest Final of All Time জয়ী হয়েই মিলেছে তার বিশ্বকাপ ট্রফি। মেসি হয়েছে - The Greatest!

এভাবেই ১৮ই ডিসেম্বর ২০২২ এ ফুটবলের মহারাজার রাজ্যাভিষেক হয়েছে।